বইটা যদি জহির রায়হানের অন্য লেখাগুলোর আগে পড়তাম মনে হয় পাঁচতারা দিতাম, কিন্তু লেখক নিজের সাথে তুলনায় এখানে খানিকটা পিছিয়ে গেলেন। লেখকের সবগুলো উপন্যাসবইটা যদি জহির রায়হানের অন্য লেখাগুলোর আগে পড়তাম মনে হয় পাঁচতারা দিতাম, কিন্তু লেখক নিজের সাথে তুলনায় এখানে খানিকটা পিছিয়ে গেলেন। লেখকের সবগুলো উপন্যাসের মাঝে আমি 'আর কতদিন'কে প্রথমে রাখবো। আর ভাষা আন্দোলন নিয়ে উপন্যাসের মাঝেও 'আরেক ফাল্গুন'কেও 'একুশে ফেব্রুয়ারী'র চেয়ে সামনে রাখবো। এটাতো একটি তারা না দেবার ব্যাখ্যা...চারটি চারটি তারার তো ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন। একুশে ফেব্রুয়ারী এবং সে সময়ের ঘটনাগুলো নানা ধরণের মানুষের জীবনে কিভাবে এসেছে তাকে খুব বেশী বাস্তব ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। এটা জরুরী না একটি আন্দোলনের পিছে সবাই পজিটিভ ভাবে যুক্ত হবে, কেউ নেগেটিভ ভাবে যুক্ত হবে কেউ বা অজ্ঞাতেই হয়ে উঠবে ইতিহাসের অংশ। সেখানেই বাস্তবতা। (view spoiler)[[তবে এখানে বাবা এবং ছেলে সামনাসামনি দাঁড় করিয়ে দেয়াটা একটু বেশীই সিনেম্যাটিক হয়ে গেছে কিন্তু আমরা জানি-ই যে একুশে ফেব্রুয়ারীর আসলে সিনেমা হবারই কথা ছিল (hide spoiler)] জাজ্বল্যমান একুশে ফেব্রুয়ারীর চেতনাকে কেন্দ্রে রেখে এই বৈচিত্র্যকে ভয়ানক সুন্দরভাবে একত্রিত করেছেন। একুশে ফেব্রুয়ারীর মাঝে যে শোষণের শেকল ভাঙ্গা স্পৃহা রয়েছে, তার চিরন্তনতা এবং বহমানতাকে যেভাবে জহির রায়হান মূর্তিত করেছেন সেটা হয়তো তিনি ভাষা সৈনিক বলেই সম্ভব হয়েছে...
"সুতোর মত সরু পানির লহরি বালির বালির উপর দিয়ে ঝিরঝির করে বয়ে যাচ্ছে। ধলপহরের আগে রাস্তায় নেমে এলো এক জোড়া খালি পা। সুতোর মত সরু পানি ঝড়না হয়ে বয়ে যাচ্ছে এখন। কয়েকটি খালি পা কংক্রিটের পথ ধরে এগিয়ে আসছে সামনে। ঝড়না এখন নদী হয়ে বয়ে চলেছে সাগরের দিকে। সামনে বিশাল সমুদ্র। সমুদ্রের মত জনতা। নগ্নপায়ে এগিয়ে চলেছে শহীদ মিনারের দিকে। অসংখ্য কালো পতাকা। পতপত করে উড়ছে। উড়ছে আকাশে। মানুষগুলো সমুদ্রের ঢেউ এর মত অসংখ্য ঢেউ তুলে এগিয়ে আসছে সামনে। ইউক্যালিপ্টাসের পাতা বৃষ্টির মত ঝরে পড়ছে নিচে। মাটিতে। ঝরে। প্রতি বছর ঝড়ে। তবু ফুরোয় না।"
নাহ, আমি যতই গলা উঁচিয়ে বলার চেষ্টা করি সব পরিবর্তনের মাঝে আমি একটি অপরিবর্তনশীল জিনিস, সেটা যে আসলে ততটা ঠিক না তা প্রমাণ করে দেবার জন্য পূর্বে পড়া এনাহ, আমি যতই গলা উঁচিয়ে বলার চেষ্টা করি সব পরিবর্তনের মাঝে আমি একটি অপরিবর্তনশীল জিনিস, সেটা যে আসলে ততটা ঠিক না তা প্রমাণ করে দেবার জন্য পূর্বে পড়া একটা বই-ই যথেষ্ট।
গতবার এই বইটি পড়ার সাথে আর এবার এই বইটি পড়ার মাঝে পার্থক্যও আরেক ফাল্গুন... “ফাল্গুন-১৪১৯”। এর আগে এই বইটির দ্রোহের মন্ত্রে জ্বলে ওঠা ছাত্র-জনতা ছিল উপন্যাসের পাত্রপাত্রী, অনেক দূরের কেউ এবং অনুপ্রেরণা। ফাল্গুন-১৪১৯ বা তার আগ-পিছের বেশ কিছু ঘটনাবলী আমার নিজের জীবনকে নিয়ে এসেছে এদের অনেকটাই কাছাকাছি।
এই উপন্যাসটি কতটা সুলিখিত তা আর নতুন করে বলবার কিছু নেই। আমার নিজস্ব ভালোলাগা এবং একাত্ম হয়ে যাওয়াকে পাঁচতারা......more